স্বদেশ ডেস্ক:
পুরান ঢাকার ঐতিহ্যের সাথে মিল রেখে আধুনিক ও উন্নত ঢাকা গড়তে পাঁচ রূপরেখা নিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। বুধবার দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তিনি এই ইশতেহার ঘোষণা করেন।
ইশতেহারে ব্যারিস্টার তাপস ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে আধুনিক খেলার মাঠ উন্নয়ন, সড়কে শৃঙ্খলা, যাত্রীছাউনি নির্মাণ, ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকা থেকে কেমিক্যাল কারখানা স্থানান্তর, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও অপসারণ, অবৈধ বিলবোর্ড ব্যানার ফেস্টুন অপসারণ করে ডিজিটাল এলইডি বিলবোর্ড স্থাপন, ডে-কেয়ার ও বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণসহ বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
ইশতেহার ঘোষণার সময় শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, দীর্ঘমেয়াদি যে পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি আমরা আশা করছি নির্বাচিত হলে সেসব আমরা বাস্তবায়ন করবো। যাতে করে ঢাকাবাসী সে তাদের মৌলিক সেবাগুলো পায়।
নির্বাচিত হলে নগর সরকার চাইবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের যে স্থানীয় সরকার আইন আছে সেখানে যে কার্যাবলি আছে, যে ক্ষমতাগুলো সেখানে আছে সেটাই যথেষ্ট। তার সুষ্ঠু প্রয়োগ হলে ঢাকাবাসী একটি উন্নত ঢাকা পাবে এবং তাদের প্রত্যাশা পূরণ হবে।
সিটি কর্পোরেশনের আইনে পঞ্চায়েত ব্যবস্থার কথা না থাকায় সেটি কীভাবে ফিরিয়ে আনবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ঢাকার একটি সামাজিক ও ঐতিহ্যের সামাজিক ব্যবস্থা। সেটি ঢাকাতে পূর্ব থেকেই চলমান রয়েছে। যতো ধরণের সামাজিক ব্যাধি আছে সেসব বন্ধ করতে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পঞ্চায়েত ব্যবস্থার মাধ্যমে আমরা আশা করছি মাদক, ছিনতাই, চুরিসহ সব সামাজিক ব্যাধি দূর করা সম্ভব।
সিটি কর্পোরেশনের যৎসামান্য আয়ে কর বৃদ্ধি না করে কীভাবে সিটি কর্পোরেশনকে স্বনির্ভর করা সম্ভব এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আমরা বলেছি কোন প্রকার কর, হোল্ডিং চার্জ, দোকানের ভাড়া বৃদ্ধি করবো না। এটা না করার কারণ আছে। এমনিতে এসব আগে থেকেই অতিমাত্রায় বৃদ্ধি করা আছে। নতুন করে কর বৃদ্ধির কোন প্রয়োজন নেই। দ্বিতীয় হলো আমাদের অনেক সেবা আমরা ঢাকাবাসীর কাছে পৌঁছে দিতে পারিনি।
সেবাগুলো নিশ্চিত করার মাধ্যমে সেখান থেকে কর আহরণের অনেক সুযোগ রয়েছে। আমি বিশ্বাসি করি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় সেসব সেবা নিশ্চিত করে রাজস্ব আহরণের ব্যাপ্তি অনেক বেশি অংশে বৃদ্ধি করতে আমরা পারবো। আগামী দুই বছরের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে নিজের পায়ে দাঁড় করানো সম্ভব।
তিনি বলেন, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। যেটি ঢাকাবাসীর কল্যাণে ঢাকাবাসীর জন্য কাজ করবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথম দিন থেকে ঐতিহ্যের ঢাকাকে আমরা সংরক্ষণ করবো। এর নিজস্ব যে স্বকিয়তা রয়েছে তা প্রস্ফুটিত করবো বিশ্ববাসীর কাছে।
যে রূপরেখা দিয়েছেন তা পাঁচ বছরে বাস্তবায়ন সম্ভব কিনা, নাকি আপনাকেও প্রধানমন্ত্রীর রূপরেখা ২০৪১ সালের দিকে যেতে হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তাপস বলেন, আমরা যে ৩০ বছরের দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করবো সেটি বাস্তবায়নের জন্য আমরা ৩০বছর পযর্ন্ত অপেক্ষা করবো না। কাজগুলোকে স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদীতে ভাগ করা হবে। আমাদের লক্ষ্য থাকবে ২০৪১ সালের আগেই আমাদের উন্নত ঢাকা গড়ে দেয়া।
একই সময় তিনি বলেন, উন্মূক্তভাবে আবর্জনার স্তুপ রাখা যাবে না। একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হবে। কারণ আমরা বায়ু দূষণসহ নানা রোগে আক্রান্ত হই তাতে। এখন সনাতন পদ্ধতিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। আমরা দেখি রাস্তায় খোলা স্থানে ময়লা, আবর্জনা রাখা হয়। আর রাখা যাবে না। আবর্জনা সাথে সাথে দৈনন্দিন ভিত্তিতে পরিষ্কার করা হবে। আমাদের আইন আমাদের নীতিমালা ভঙ্গ করে যদি কোন সংস্থা সেটা করে থাকে, তাহলে তাদেরকে জরিমানা করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আইন এবং নীতিমালা প্রয়োগ করা হবে। আবর্জনা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় কিনা সেটাও আমরা খতিয়ে দেখবো। সেই সাথে ইউটিলিটি চ্যানেলকেও সুস্থ ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা হবে বলে জানান ফজলে নূর তাপস।